Recents in Beach

Salt (লবণ)

                                     লবণ

ধরো তোমাকে জিজ্ঞেস করা হল তোমার সবথেকে প্রিয় জিনিস কি? তুমি উত্তরে বললে যে তোমার প্রিয় জিনিস হল লবণ! তোমার উত্তরটা শুনে হয়তো পাশের জনের অদ্ভুত লাগতেই পারে। কারণ এত দামী দামী জিনিস এর মধ্যে তুমি শুধু লবণ টাকেই বেছে নিয়েছো। তোমার উত্তরটা যে এতটা ও অদ্ভুত ছিল না তার স্বপক্ষে আমি তোমাদের একটা গল্প শোনাবো। গল্পটা লবন এর উপরেই হবে। এই গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে এই গল্পের কোন মিল নেই। তবে শোনো,,,



     নেক বছর আগেকার কথা, ঈশাননগর নামে একটি রাজ্য ছিল, ওই রাজ্যের রাজার নাম ছিল রাধাচরণ সিংহ।
তিনি ছিলেন দায়িত্বশীল ও প্রভাবশালী রাজা । প্রজারা রাজাকে খুবই ভালবাসতেন এবং সম্মান দিতেন। রাজা প্রজাদের প্রতিপালনে কোন দিন ত্রুটি রাখেননি। তিনি সবসময় প্রজাদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছেন। মোট কথায় বলতে গেলে রাজ্যটি ছিল খুবই সুখী রাজ্য। 


   রাজা রাধাচরণ সিংহের তিনটি কন্যা ছিল। বড় কন্যার নাম ছিল রুহিনী, মধ্যম কন্যার নাম ছিল মোহিনী , সবচেয়ে ছোট কন্যার নাম ছিল সোহিনী। রাজা তার তিন কন্যাকে খুব ভালোবাসতেন।  রাজার বড় কন্যা ও মধ্যম কন্যা সব সময় একসাথে থাকলেও , ছোট কন্যা সোহিনী ছিল একটু অন্য রকমের। সোহিনী সবসময় একা থাকতে পছন্দ করত , সে সবসময় প্রকৃতির সাথে খেলা করতো। সব সময় বনের গাছপালা, ফুল-ফল ও পাখি এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকত। সোহিনীর বয়স ছিল ১৯ এর মতো। সে ছিল নির্ভীক, সত্য ও উচিত কথা বলতে কখনো ভয় পেত না। কোন কথা যতই কঠিন ও কটূ হোক না কেন তার মুখে কোন দ্বিধাবোধ ছিল না। সে সর্বদাই উচিত সত্য কথা বলতো।
   একদিন রাজা ও রানী ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল যে , আমরা তো আমাদের কন্যাদের খুবই ভালোবাসি। ওরা আমাদের কতটুকু ভালবাসে তার একটা পরীক্ষা নেওয়া যাক কাল সকালে।


   সিদ্ধান্ত অনুসারে ঠিক পরের দিন সকাল বেলা রাজা তার তিন কন্যা কে নিজের কাছে ডেকে আনলেন। রাজা তার তিন কন্যা কে ঠিক একই প্রশ্ন করলেন। 
 প্রথম কন্যাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাসো?  উত্তরে প্রথম কন্যা বলল হে পিতা আমি তোমাকে হিরা, মনি, মুক্তা , স্বর্ণালংকারের মত খুব ভালোবাসি। উত্তর শুনে রাজা খুব খুশি হলেন। 
রাজা তার দ্বিতীয় কন্যাকেও ঠিক একই প্রশ্ন করলেন, তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাসো? দ্বিতীয় কন্যা ও ঠিক একই উত্তর দিল। রাজা দ্বিতীয় কন্যার উত্তরেও খুব খুশি হলেন।
রাজা তার তৃতীয় কন্যা অর্থাৎ ছোট কন্যাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাসো? উত্তরে ছোট কন্যা সোহিনী বলল, পিতা আমি লবণ কে যেমন ভালোবাসি তেমনি তোমাকেও খুবই ভালোবাসি। 
ছোট কন্যার উত্তর শুনে রাজা অবাক হয়ে গেল, সে অসন্তুষ্ট হয়ে রেগে গিয়ে বলল, কন্যা আমি তোমাকে এত ভালোবাসি আর তুমি আমাকে সামান্য লবন এর সাথে তুলনা করেছো। তোমার উত্তর শুনে আমি মোটেও খুশি নই, এক্ষুনি বেরিয়ে যাও আমার রাজ্য হতে। পিতার আদেশ শুনে সে খুবই দুঃখ পেল।

সে রাজ্য থেকে বেরিয়ে জঙ্গলের পথ ধরে চলতে লাগলো। পশু পাখিদের সাথে তার খুব ভাব ছিল বলেই কোন জঙ্গলি পশু তার ক্ষতি করলো না, ওল্টো সাহায্যের পথ বাড়িয়ে দিল। গভীর জঙ্গল দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে অনেক দূরে একটি কুঁড়েঘর দেখতে পেল। কুঁড়ে ঘরে একটি বুড়ি বাস করত। সোহিনী বুড়ি মায়ের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করল। বুড়ি মা বললো ঠিক আছে বাপু আমি তোমাকে আশ্রয় দিতে পারব কিন্তু খাবার দেবে কে?  সোহিনী বুড়ি মাকে বলল ঠিক আছে আশ্রয় খানি পেলেই চলবে বুড়ি মা। সোহিনী বুড়ি মাকে জিজ্ঞেস করল জঙ্গলে কি খাবার জোগাড় করা যাবে? বুড়ি মা বলল অবশ্যই করা যাবে কিন্তু খাবার জোগাড় করতে হলে আগে কিছু কাজ করতে হবে। সোহিনী জিজ্ঞেস করল কি কাজ? বুড়ি মা বললো এইটা তেমন কোন কঠিন কাজ না, আমি আগে এই কাজ করতাম এখন বয়স হয়ে যাওয়াই চলতে ফিরতে পারি না তাই কাজ করতে পারি না। দক্ষিণ বনের জঙ্গলে ময়ূরের বিল আছে। সেখানে প্রচুর ময়ূরের পালক পড়ে থাকে। তোমাকে প্রতিদিন সেই পালক কুড়ে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে। এবং এই পালক দিয়ে পাখা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতে হবে। এই পালক বিক্রি করে যে টাকা আসবে তা দিয়ে অবশ্যই প্রতিদিন খাবার জুটে যাবে। 


বুড়ি মায়ের কথামতো সে প্রতিদিন ময়ূর পালক কুড়ে বাড়িতে নিয়ে আসতো। এবং সেই পালক দিয়ে পাখা তৈরি করে হাটে বিক্রি করতে নিয়ে যেত। পাখা বিক্রি করে যে টাকা আয় করতো তা দিয়ে তার দিন আরামে চলতে লাগলো, খাবারের ও কোন সমস্যা ছিল না। এইভাবে সে পাখা বিক্রি করে বুড়ি মায়ের আশীর্বাদে একটি বড় অট্টালিকাও তৈরি করল। যা তার পিতার রাজ প্রাসাদ থেকেও বড় ছিল। 


 একদিন তার মা-বাবা ও বোনেদের কথা খুব মনে পড়ছিল এবং সে জঙ্গলে বসে কাঁদছিল। এমন সময় একটি ছেলে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় তার কান্নার শব্দ শুনতে পেল, এবং তার কাছে এগিয়ে এলো। সে এসে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে তোমার, কাঁদছো কেন? ছেলেটি আসলে আর কেউ নয়, সে ছিল সোহিনীর স্বপ্নের রাজকুমার। সে রাজকুমারের কাছে তার পূর্বের সব কাহিনী খুলে বললো। রাজকুমার বলল ঠিক আছে কান্না করতে হবে না আমি সব ঠিক করে দেব। 
 দুই জন মিলে পরিকল্পনা করল যে, ‌ সে তার অট্টালিকা তৈরীর শুভ যাত্রার অনুষ্ঠানে গ্রামের লোকদের এবং তার মা, বাবা ও বোনেদের নিমন্ত্রন করলো। সে তার মা-বাবার কাছে নিজের পরিচয় গোপন করে ছিল, কারণ যদি তারা তার সত্যি পরিচয় জানতে পারত তাহলে তারা আসতে চাইত না।
সে সবার জন্য খাবারের আয়োজন করল। সে সবাইকে খাবার পরিবেশন করলো সাথে তার মা-বাবাকে ও। টেবিলের উপর তার মা-বাবা ও বোনেদের জন্যে রংবেরঙের খাবার ও নানা স্বাদের খাবার রাখা ছিল। তফাৎ শুধু এতোটুকুই ছিলো যে গ্রামের লোকেদের খাবারে লবন দেওয়া ছিল এবং টেবিলের উপর রাখা খাবার গুলির মধ্যে কোন লবণ দেয়া হয়নি। সোহিনী ছদ্মবেশে তার মা-বাবাকে খাবার গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করলো। 


 রাজা ও রানী এবং তার বোনেরা যখন মুখে খাবার তুলল, তখন অনুভব করল খাবারের মধ্যে কোন লবণ দেওয়া হয়নি। খাবার গুলি দেখতে খুব সুন্দর রংবেরঙের ছিল কিন্তু লবণ বিহীন খাবারগুলি স্বাদে ছিল খুব বাজে। 
তখন রাজা মুখ ঢেকে রাখা ছদ্মবেশে থাকা সোহিনী কে জিজ্ঞেস করলো এই মেয়ে এই খাবারে লবণ দেওয়া হয়নি কেন? এইখানে কি লবণ পাওয়া যায় না? 
তখন সোহিনী উত্তরে বলল , রাজা মহাশয় লবণ ছাড়া খাবারগুলি কি গ্রহণ করা যায় না ? এগুলি তো দেখতে সুন্দর ই। 

রাজা মেয়েটির গলার শব্দ শুনে বুঝতে পারল, যে এই গলার স্বরটি খুব চেনা। তখন রাজা মেয়েটির মুখে ঢাকা কাপড় সরিয়ে ফেললো। তখন রাজা দেখতে পেল কাপড়ের আড়ালে ছিল আর কেউ নয় , আসলে সে রাজার ছোট রাজকুমারী। 
তখন রাজা অনুভব করল, এক লবণের জন্য সে তার কন্যাকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেছিল। এখন সে বুঝতে পারল খাবার যতই দেখতে সুন্দর হোক না কেন লবণ ছাড়া এই খাবার স্বাদে খুবই বাজে হয়। তার জন্যই তো তার কন্যা তাকে লবনের সাথে তুলনা করেছিল। আসলে লবণের মূল্য কতখানি সে তখন বুঝতে পারলো। সে তখন নিজেকে খুব দুঃখিত এবং লজ্জিত মনে করল। সে তখন তার কন্যার কাছে ক্ষমা চাইলো এবং রাজ্যে ফিরে যেতে অনুরোধ করলো। 
তখন সোহিনী বলল পিতা আপনার উপর আমার কোন অভিমান ছিল না। আমিতো শুধু বুঝাতে চেয়েছিলাম যে লবণ এর মূল্য কতখানি। তারপরও যদি কোন ভুল করে থাকি তাহলে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন ‌। 
 এই ভাবে তাদের পরিবার আবার আনন্দে ভরে উঠলো। রাজকুমারী সোহিনীর সফলতার পেছনে বুড়ি মা ও রাজকুমারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। 

Post a Comment

0 Comments